আ,হ,জুবেদঃ ‘কৃষকরাই বাংলাদেশের চালিকাশক্তি’,‘কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে’ আর এই বাংলার কৃষক, বাংলার চাষা, বাংলার মেহনতি লোকজন কৃষি প্রধান অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশে এক রঙিন সপ্ন দেখে চলেছেন।
মূলত, বাংলার কৃষকদের চিন্তা চেতনায় ও ভাবনায় বাংলার ৬৮ হাজার বুকে কৃষি খামারের গৌরবোজ্জ্বল দৃষ্টান্তে ও সাফল্যে উদ্ভাসিত হোক গোটা দেশ,জাতি।
স্বার্থক এবং সফল হোক কৃষিজীবী মানুষদের অক্লান্ত পরিশ্রম, এমনই কামনা করেন ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ভিটেমাটিতে বসবাসকারী ১৬ কোটি জনতা।
কৃষি প্রধান অপার সম্ভাবনার দেশ ছেড়ে প্রবাসে এসেও শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কৃষি ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল ও অনবদ্য দৃষ্টান্ত রেখে চলেছেন বাংলার সূর্য সন্তান প্রবাসীরা।
১৪ সেপ্টেম্বর বুধবার কুয়েতের সীমান্তবর্তী এলাকা ওয়াফরা ও পরবর্তীতে আবদালি এলাকায় কৃষি খামার পরিদর্শন করতে গিয়ে মনে হয়েছিল যেনো এক খণ্ড বাংলার গ্রামেই পা রেখেছি।
ধুধু মরুভুমির এই বিশাল বুকজুড়ে লাল-সবুজের মনমুগ্ধকর দৃশ্যের হাতছানি। দেখেই মন জুড়িয়ে যায়।
প্রায় জনশূন্য এই বিশাল ধুধু মরুর বুকে কৃষকেরা মনের আনন্দে চাষাবাদ করছে-মাসকলাই, ফুঁল-বাধাঁ কপি, পালং শাক, লাল শাকসহ বিভিন্ন সবজি ও আবাদি ফসল। মুহূর্তের মধ্যেই মনে হয়েছে যেন ধুধু বালুচরে “একখন্ড লাল-সবুজ”। প্রচণ্ড গরমের এই দেশে শীতকালীন সবজি চাষ কীভাবে সম্ভব হয়েছে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে কুয়েতে কৃষিকর্মে নিয়োজিত সিলেটের মাখন মিয়া বলেন, সবজি উৎপাদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে এবং পরিশ্রমী উৎপাদক হতে পারলে এটি কোনো ভাবেই অসম্ভব নয়।
প্রবাসী মাখন মিয়া দীর্ঘ প্রায় ২২ বছর ধরে কুয়েতের ওয়াফরা এলাকায় কৃষিক্ষেতে কাজ করে নিজে অনেকটাই স্বাবলম্বী হতে পেরেছেন, কথার এক প্রসঙ্গে তিনি একথা যোগ করেন।
কুয়েতের ওয়াফরা এলাকায় মরুর বুকের এই কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার বাংলাদেশীরা তীব্র রোদে প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে কাজ করে চলেছেন।
তবে পরিশ্রমের তুলনায় তাদের পারিশ্রমিক একেবারেই কম বলে জানালেন সেখানকার কৃষিজীবী প্রবাসীরা। ওয়াফরা এলাকায় কৃষি কর্মে নিয়োজিত কৃষিজীবী প্রবাসীরা বলেন, আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে যাচ্ছে, তাতে করে যেমন আমাদের পরিবার গুলো সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছে; ঠিক তেমনই এথেকে রেমিট্যান্স ক্রমাগত বাড়ছে, দেশ-জাতি সামগ্রিকভাবে লাভবান হচ্ছে।
কিন্তু আমরা কী পাচ্ছি?
ওয়াফরা এলাকার কৃষিজীবী প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমস্যার যেনো অন্ত নেই, আর সেটি জানা সম্ভব হয়েছে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে।
কুয়েতে ওয়াফরা ও আব্দালি এদুটি মরু অঞ্চল কারো সীমাহীন কষ্টের নেই শেষ আবার কারো জন্য বিরামহীন আনন্দ, ভোগ-বিলাস আর শান্তি ভোগের স্থল।
যেমন ওয়াফরা ও আব্দালী মরুর বুকে এ দুখণ্ড এলাকাকে কুয়েতের গ্রামাঞ্চল বলা হয়ে থাকে। আর এই গ্রামাঞ্চল গুলোতে কুয়েতের নাগরিকরা শহরের শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকটা শান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে প্রতি সাপ্তাহে ছুঠে যান নিরন্তর শান্তি ভোগের মরু অঞ্চলের ঠুকরো ঠুকরো নীড়ে।
আর অন্যদিকে, কৃষিজীবী প্রবাসী বাংলাদেশীরা মরু অঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্রে প্রচণ্ড লড়াই করে অনেক কিছু হারিয়ে অনেকেই হচ্ছে জয়ী কিংবা পরাজিত, আবার কেউ মরু অঞ্চলে যুদ্ধরত সৈনিকের ন্যায় ক্ষুধার্ত ও প্রচণ্ড তৃষ্ণার্ত অবস্থায় জীবনের সকল শক্তি দিয়ে অর্থের পিছনে ছুঠে চলেছে অনবরত।
ওয়াফরা এলাকার ভেজিটেবল মার্কেটের বিক্রেতারা অগ্রদৃষ্টি ও তাজাখবর২৪.কম- কে দেয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে
তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন।
এসময় ওয়াফরায় বসবাসরত কৃষিজীবী প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের সুখদুঃখের অনেক কথা ও কিছু দাবী দাওয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে, বেশীরভাগ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এর দায়িত্বের ক্ষেত্রে চরম অবহেলার কথা উল্লেখ করেন।
তারা বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, এটি শুধু বহির্বিশ্বে বসবাসরত প্রবাসীদের কল্যাণের জন্য করা হয়েছে; কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা দেখিনি যে, এই মন্ত্রণালয় দ্বারা প্রবাসীরা আশানুরূপ উপকৃত হয়েছে। এদিকে ওয়াফরার কৃষিজীবী প্রবাসীরা তাদের কুয়েতের জীবনযাপন সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, এই মরুর বুকে প্রচণ্ড কষ্ট করে হলেও কাজ করে আমরা মোটামুটি লাভবান হচ্ছি একথা আমরা স্বীকার করছি।
তবে অনেক গুলো সমস্যার মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে, যেমন বর্তমানে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিতে একেতো প্রচুর অর্থ ব্যয় হচ্ছে; তারপর দূতাবাসে যেতে প্রায় পুরো একটা দিন আমাদের খরচ হচ্ছে।
যদিও পুর্বে এখানে (ওয়াফরাতে) বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি শাখা অফিস ছিল, যেটি প্রতি সাপ্তাহে খুলা হতো; কিন্তু এখন আর সেই শাখা অফিসটি এখানে নেই।
সেজন্যে আমাদেরকে অনেক ঝামেলার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
অন্যদিকে কুয়েতের মরু অঞ্চল আবাদালির কৃষি খামার এলাকায় গিয়ে দেখাগেছে, সেখানে ব্যয়বহুল সবজি চাষ, আর সেগুলো দেখে অনেকটাই মনে হয়েছে যেনো ”খাযনার চেয়ে বাজনা বেশি” অর্থাৎ উৎপাদিত ফসলের মুল্যের চেয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়াকরণে খরচ হচ্ছে বেশি।
যদিও দেশটির সরকার প্রচুর পরিমাণের ভুর্তুকি দিচ্ছে কৃষি খামার খাতে।
আবাদালি এলাকার একটি ৪০০ কিলোমিটার আয়াতনের সবজি খামারের মালিক এক কুয়েতির সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়।
শেখ হামেদ ফাওজান নামের সেই সবজি খামারের কুয়েতি মালিক বলেন, বাংলাদেশী দ্বারা পরিচালিত আমার এই কৃষি খামারটি খুবই লাভজনক হচ্ছে, এবং আমি বাংলাদেশীদের খুবই ভালোবাসি।
তিনি বলেন, আমার কৃষি খামারের (মাসুল) সুপারভাইজার আলম, সে খুবই কর্মনিষ্ঠ এবং পরিশ্রমি।
মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েতে মরুর বুকে দুটি মরু অঞ্চলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সীমাহীন পরিশ্রমের ফসল উৎপাদিত নানা প্রকারের সবজিতে ভরপুর দেশটির বাজার।
কুয়েতের সবজির বাজারে গেলে’ই মনে হয়, এসব সবজি গুলো যেনো প্রবাসী বাংলাদেশীদের হাতের ছোঁয়া পেয়ে এসেছে, নিশ্চয় এটিতে দেশীয় সবজির স্বাদ পাওয়া যাবে।